শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ, ১৪৩১
স্পোর্টস ডেস্ক।।
কাবুল থেকে ৯৩০ কিলোমিটার দূরের জনপদ সংঘি- রাত নামতেই যেখানে বসে মানুষের মেলা। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে কেউ আসেন একটু আড্ডা দিতে, কেউবা হাঁটতে আবার কেউ সারি সারি দোকানে হরেক রকম খাবারের স্বাদ নিতে। গত কয়েকদিন সেই জনপদে ভয়ংকর এক আবহ। সুনসান নীরবতা, মানুষের আনাগোনা নেই বললেই চলে। দোকানগুলোও বন্ধ পড়ে আছে। মাঝেমধ্যে সাঁই করে পাশ দিয়ে একটা গাড়ি চলে যাচ্ছে- সেই গাড়িতে চার পাঁচজন অস্ত্র হাতে বসা, মাথায় পাগড়ি, গায়ে জুব্বা। কী ভূতুড়ে, তাই না! কীভাবে অনাড়ম্বর সংঘি জনপদ হয়ে গেল ভয়ের পল্লি। পাশের বাড়িগুলোতে মানুষ আছে, কিন্তু কারও সাড়াশব্দ খুব একটা নেই।
ঠিক এমন শিউরে ওঠার মতো কিছু পরিস্থিতির কথা শুনে ব্যথিত হয়েছেন আফগানিস্তানের নারী ফুটবল দলের সাবেক দলনেতা খালিদা পোপাল। বর্তমানে যারা আফগান ফুটবল দলের হয়ে খেলছেন, তাদের অনেকে তাকে ফোন দিয়ে তাদের অবস্থার কথাগুলো বলেছেন। বলা যায়, নির্ঘুম রাত কেঁদেই পার করছেন নারী ফুটবলাররা।
সম্প্রতি বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পোপাল বলেন, ‘আমি কয়েকজন নারী ফুটবলারের কল পেয়েছি, যারা কিনা কাঁদতে কাঁদতে আমাকে বলেছিল, আমরা তো শেষ, ঘরে আটকে আছি। বাইরে যাওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই। খুব আতঙ্কে দিন কাটছে আমাদের। এভাবে স্বপ্নগুলো নিঃশেষ হয়ে যাবে, ভাবিনি। এখন সবকিছুই দুঃস্বপ্নের মতো মনে হয়। খেলোয়াড়রা আমাকে ভিডিও পাঠাচ্ছে এবং বলছে- লোকজন যারা বিরোধিতা করেছিল, তারা কেউ বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে না। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। এসব দেখে আমরা কান্না ধরে রাখতে পারছি না। কোনো প্রকার নিরাপত্তা নেই। কখন কী হয়, কে জানে।’
একটা সময় যে নারীরা ছিল উজ্জীবিত, নিজেদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার, তারা এখন ভয় নিয়ে দিন কাটাচ্ছে। পোপাল সবাইকে সামাজিক মাধ্যম থেকে নিষ্ক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এই সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া শাটডাউন করাই উচিত হবে, ‘আমরা সবসময় নারীদের প্রতিবাদ করার জন্য উৎসাহ দিই। এখন বলছি, সব সোশ্যাল মিডিয়া শাটডাউন কর। ছবিগুলো রিমুভ করে দাও। তোমাদের ভয়েজও নিচু করতে হবে। কেননা, পরিস্থিতি এখন আগের মতো নেই।’
ফুটবল ছাড়ার পর ২০১১ সালে আফগানিস্তান ছেড়ে ডেনমার্কে চলে যান পোপাল। সেখানেই তিনি স্থায়ী হয়ে যান। মাঝেমধ্যে বেড়াতে আসেন প্রিয় জন্মভূমিতে। এখন আফগানিস্তানের এমন নাজুক পরিস্থিতি তাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে কষ্ট দিচ্ছে। যেটা পোপাল কখনও কল্পনা করেননি।